বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন রক্তাক্ত আন্দোলনের চুড়ান্ত বিজয়ের মাধ্যমে। কিন্তু গণমানুষের চাহিদার সাথে সংগতি রেখে কাজ চালানো দিনকে দিন কঠিন হচ্ছে তাদের জন্য।
কিছু সামরিক বাহিনীর অফিসার ও পুলিশ অফিসার চাকরিচ্যুত হলেও বহাল তবিয়তে রয়েছে এডমিন ও অন্যান্য ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তারা।
বিগত সময়ে মাঠ পর্যায়ে ডিসি এসপি ইউএনও নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য ভোট কারচুপিসহ নানা প্রক্রিয়া অবলম্বন করেন। ২/৪ টি ব্যতিক্রম ছাড়া এসব অফিসারগণ বিপুল পরিমাণ আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেন। আওয়ামী সুবিধাভোগী সকল সচিব, অতিরিক্ত সচিব, বিভাগীয় কমিশনার, যুগ্মসচিব, উপসচিব, ডিসি, ইউএনও, এসিল্যান্ড পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করা প্রায় প্রতিটি অফিসার কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে।
পরবর্তীতে পুরাতন ডিসিদের প্রত্যাহার করে যাদের পদায়ন করা হয়েছে, তাদের অধিকাংশ ছিল আওয়ামী সুবিধাভোগী। আর এসব পদায়নে মূখ্য ভুমিকা পালন করেছেন চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়া আলী ইমাম মজুমদার এবং প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সাবেক ডিজি এডমিন আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকী।
শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি কারা কারা বিশ্বস্ত অফিসার সেই তালিকা ডিজি এডমিন হিসেবে প্রণয়ন করতেন আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকী।
কয়েক স্তরের যাচাই বাছাই শেষে দলীয় পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরই কেবল গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পদায়ন করা হতো।
৫ অগাস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকী কিছুদিন পালিয়ে থাকে তার বড় ভাই যুগ্মসচিব রেজা কিবরিয়া সিদ্দিকীর বাসায়। তিনি আশংকায় ছিলেন তার বিরুদ্ধে মামলাসহ শাস্তিমূলক বদলী হবে। কিন্তু আলী ইমাম মজুমদার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়ার পর তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পদায়ন করা হয়। আলী ইমাম মজুমদার যখন সচিব ছিলেন আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকী তার পিএস ছিলেন।
এরপর প্রশাসনে সৃষ্টি হয় অচলাবস্থা। যারা প্রমোশন ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পোস্টিং পাননি, তারা আশাবাদী ছিলেন প্রমোশন পাওয়ার পর তাদের ভালো পোস্টিং হবে। বিশেষ করে ২৪ ও ২৫ বিসিএস এর যেসকল অফিসার বিএনপি পন্থী হিসেবে চিহ্নিত ছিলেন তারা ডিসি হিসেবে নিয়োগ পাবেন। কিন্তু বর্তমান সরকারের কিছু অনভিজ্ঞতার সুযোগে আলী ইমাম মজুমদার গং আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকীর মাধ্যমে এমন তালিকা প্রস্তুত করেন যার ফলে বেশীরভাগ ডিসি হিসেবে নিয়োগ পায় আওয়ামী লীগের সুবিধা ভোগী অফিসার। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে সুবিধাবঞ্চিত অফিসারগণ ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তারা মন্ত্রণালয়ে গিয়ে হৈচৈ করে বিক্ষোভ প্রতিবাদ করতে থাকেন।
পরবর্তীতে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিত স্বাস্থ্যসচিবকে প্রধান করে। তদন্ত শেষে বঞ্চিত অফিসারদের দায়ী করে রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়।
এরপর ডিসি নিয়োগ নিয়ে মিডিয়ায় নানা ধরনের দুর্নীতির তথ্য প্রকাশিত হতে থাকে। মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক নিউজ হলেও দায়ীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়ার পরিবর্তে বঞ্চিত অফিসারদের মধ্যে ১৭ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহনের সুপারিশ করা হয়।
দীর্ঘদিন বঞ্চিত থেকে এখনো গুরুত্বপূর্ণ পদায়ন হতে বঞ্চিত এবং শাস্তির সম্মুখীন হওয়ার সংবাদে অনেক অফিসার মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন।
আওয়ামী লীগার হিসেবে চিহ্নিত যেসব ডিসি নিয়োগ পেয়েছেন, তাদের প্রায় সবাই গা-ছাড়া ভাব নিয়ে প্রশাসন চালাচ্ছেন। পুরাতন অফিসার বদলাতে তাদের মধ্যে অনীহা কাজ করছে। মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরগুলোতে একই অবস্থা বিরাজ করছে। প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্যান্য উপদেষ্টাগণ আন্তরিক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু সিভিল প্রশাসন ঠিক করতে না পারলে সুশৃঙ্খল অবস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয় বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন।